মাস্টার মাইন্ড স্কুলের শিক্ষার্থী আনুশকার দাফন হলো নিজ গ্রাম কুষ্টিয়ার কমলাপুরে ।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :
রাজধানীর ধানমন্ডির মাস্টার মাইন্ড স্কুলের ও লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নুর আমিনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার সকাল সাতটায় জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া সদরের গোপালপুর গ্রামে জানাযা শেষে গোপালপুর গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় অংশগ্রহণ করেন আনুশকার পরবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজনসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ।
আনুশকার দাফন শেষে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা দাবি জানান, আনুশকাকে হত্যায় প্রধান অভিযুক্ত ফারদিন ইফতেখার দীহানের কঠোর শাস্তিসহ ঘটনার সঙ্গে আর কারো সংশ্লষ্টিতা থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। যাতে এই ধরণের ঘটনা আর কারো সঙ্গে না ঘটে।
এর আগে ভোরে আনুশকার মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স গ্রামে পৌঁছায়। মরদেহ দেখতে ছুটে আসেন আত্মীয়-স্বজনসহ আশেপাশের গ্রামের মানুষ। এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই।
উল্লেখ্য, বন্ধু দীহানের ডাকে সাড়া দিয়ে গত বৃহস্পতিবার ধানমন্ডির বাসা থেকে কলাবাগান এলাকায় যায় আনুশকা। এরপর দিহান তাকে কলাবাগানের ডলফিন গলির বাসায় নিয়ে যান। পুলিশ বলছে, বাসা খালি থাকার সুযোগ নিয়ে আনুশকার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে জড়ান দিহান। ওই বাসাতেই আনুশকা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অচেতন হয়ে পড়েন। ওই অবস্থায় দীহান তাকে নিয়ে যান ধানমন্ডির আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান- হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে। মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় দিহানকে একমাত্র আসামি করে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন তার বাবা।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে ভুক্তভোগী ছাত্রীটির মা কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে যান। একঘণ্টা পরে তার বাবাও ব্যবসায়িক কাজে বাসা থেকে বের হয়ে যান। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ওই ছাত্রী তার মাকে ফোন করে কোচিং থেকে পড়ালেখার পেপার্স আনার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। এই মামলার একমাত্র আসামি 'ও' লেভেল শেষ করা দিহান বেলা ১টা ১৮ মিনিটে ফোন করে ওই শিক্ষার্থীর মাকে জানান, মেয়েটি তার বাসায় গিয়েছিলেন। হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়েছে। অফিস থেকে বের হয়ে আনুমানিক দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা হাসপাতালে পৌঁছেন। হাসপাতালের কর্মচারীদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসামি তার মেয়েকে কলাবাগান ডলফিন গলির বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে অচেতন হয়ে পড়লে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আসামি নিজেই তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যান। খবর পেয়ে কলাবাগান থানা পুলিশের একটি দল হাসপাতালে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায় বলে উল্লেখ করা হয় এজাহারে। মামলায় আরও বলা হয়েছে-আনুশকাকে একা বাসায় পেয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেছেন দিহান। আনুশকাকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে দিহান তার বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। অমানবিক কার্যকলাপের কারণে প্রচুর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট অন্য একটি সূত্র জানায়, আড়াই মাস আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সূত্রে দীহানের সঙ্গে পরিচয় হয় আনুশকার। এরপর তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়। পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয় দিহান একাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। শুক্রবার দিহানকে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। তবে আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তিনি।
ঢাক মেডিকেল কলেজ মর্গে আনুশকার মা বলেন, বখাটে ছেলে আমার মেয়ের সর্বনাশ করেছে। মেয়েকে নিয়ে আমাদের অনেকে স্বপ্ন ছিল। মেয়েকে হত্যার বিচার চাই।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ের বয়স ১৭ বছর। তবে সুরতহাল রিপোর্টে মেয়ের বয়স পুলিশ ১৯ বছর উল্লেখ করা হয়েছে। কেন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে প্রাপ্তবয়স্ক দেখানোর চেষ্টা করা হলো?
পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আনুশকা তার বন্ধুর বাসায় যায়। সেখানে তার রক্তক্ষরণ হয়। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়। হাসপাতাল থেকে দিহানকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি দাবি করেছেন, উভয়ের সম্মতিতে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল। ওই বাসা থেকে অনেক আলামত জব্দ করা হয়েছে। যেখানে শারীরিক সম্পর্কের প্রমাণ মিলেছে।
জানা গেছে, দীহানের বাবার নাম আব্দুর রউফ সরকার। তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর থানার রাতুব এলাকায়। তবে তারা বসবাস করেন কলাবাগান থানাধীন ডলফিনগলিতে। বাড়ি নম্বর ৬৩/৪। ফ্ল্যাট নম্বর ডি-২। দীহান ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে 'ও' লেভেল শেষ করেছেন।